স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলা মামলার আসামি এবং যুবলীগ নেতা মইন খান বাবলুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মুসলিম বেনারসি এন্ড জামদানি সোসাইটির মেলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পৌর শহরের ষোলঘরে ক্রীড়া সংস্থার খেলার মাঠে এই বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলা চালুর পূর্বে খেলার মাঠে মেলা বন্ধে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইজিপি ও জেলা প্রশাসককে পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে বৈষম্যবিরোধী সচেতন জনতা। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতা বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো যুবলীগ নেতা বাবলুকে খেলার মাঠে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এনিয়ে ক্ষুভে ফুঁসছেন সুনামগঞ্জের জনসাধারণ। মেলা চালুর আগে ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা বাবলুর খেলার মাঠে মেলা বন্ধে শিক্ষার্থী, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ সচেতন জনতা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে পৌর শহরে বৈষম্যবিরোধী সচেতন জনতা, ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে জুলাই বিপ্লবে অনেক ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছে। অনেকেই আহত অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তৎকালীন সময়ে সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার উপর হামলার সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগে নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন বাংলাদেশ মুসলিম বেনারসি এন্ড জামদানি সোসাইটি চেয়ারম্যান মঈন খান বাবলু। যাঁর বিরুদ্ধে সিলেট আদালতে মামলার করেছেন তারিফ উদ্দিন নামের এক ভুক্তভোগী। ছাত্রদের উপর হামলা মামলার অন্যতম আসামি মইন খান বাবলুকে মাসব্যাপী সুনামগঞ্জ শিল্প পণ্য মেলা আয়োজনের দায়িত্ব দেয়ায় এলাকায় ছাত্রজনতার মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী ছাত্র-জনতার বাংলাদেশে আওয়ামী দোসরকে মেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। খেলার মাঠে মেলা বন্ধে দাবি জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত না করায় নিন্দা জানানো হয়েছে এই আবেদনে। অবনতিবিলম্বে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মামলার আসামি মইন খান বাবলুকে মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয় আবেদনে।
এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় ক্রীড়া সংস্থার খেলার মাঠে এক মাস ধরে বাণিজ্য মেলা চলছে। আরও ২০ দিন আগে মাঠ দখলে নেন আয়োজকেরা। মাঠের চারপাশে আবাসিক এলাকা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকায় শুরু থেকেই মেলার জন্য মাঠ বরাদ্দ না দেওয়ার দাবি ছিল এলাকাবাসীর। এ জন্য বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। এখন গভীর রাত পর্যন্ত মেলার মাইকের উচ্চ শব্দ ও গানবাজনায় অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ।
শুধু মেলার ভেতরে নয়, মেলার প্রচার ও লটারিতে অংশ নিতে মানুষকে উৎসাহিত করতে শহরজুড়ে চলছে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মাইকে মেলার প্রচার। যদিও জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া অনুমতিপত্রে মেলার ভেতরেই মাইকের ব্যবহার নিষেধ রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বাংলাদেশ বেনারসি মসলিন ও জামদানি সোসাইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু মেলার আয়োজকেরা মাঠটি দখলে নেন তারও ২০ দিন আগে। এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে বিগত দিনেও আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহল এখানে অনেকটা জোর করে দুই মাস, তিন মাস মাঠ দখল করে মেলা করেছে। এবার শুরু থেকেই এলাকাবাসী মেলার জন্য খেলার মাঠ বরাদ্দ না দিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, এই মাঠের চারপাশে আবাসিক এলাকা। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ রয়েছে। এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলার একমাত্র মাঠ এটি। এখানে মেলা আয়োজনের নামে মাইক দিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজানোয় এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে। অসুস্থ লোকজন পড়েন বেশি বিপাকে। এমনিতেই মেলাতে উচ্চ শব্দে মাইক বাজে। রাত ১০টার পর শুরু হয় লটারি, চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।
রোববার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবারও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে মেলায় উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো ও গানবাজনার নামে অশ্লীলতা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। কিন্তু কোনও প্রতিকার মেলেনি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা মামলার আসামি দ্বারা বাণিজ্য মেলার আয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, আইনজীবী, ব্যবসায়িসহ সচেতন জনতা। এটি বন্ধে সংশ্লিষ্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
ছাত্র-জনতার হামলা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মইন খান বাবলুর বাণিজ্য মেলার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রশাসিক কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাহীনুর রহমান বলেন , ডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে স্যার ঢাকায় আছেন। পুলিশ ভেরিভিকেশন করেছে আমরা ক্লিয়িারেন্স পেয়েছি, তাই মেলার অনুমতি দিয়েছি। তাছাড়া আর কোনোও কিছু আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে দ্বায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ডিসি সাহেব বাহিরে গেছে। ছাত্র-জনতার হামলা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মইন খান বাবলুর বাণিজ্য মেলার বিষয়ে তার ধারণা নেই।
Leave a Reply